মালদা

ফের কুসংস্কারের ছায়া পুরাতন মালদায়, ডাইনি সন্দেহে গ্রামছাড়া এক পরিবার

বেশ কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ফের কুসংস্কার থাবা বসাল পুরাতন মালদার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে। ডাইনি সন্দেহে আদিবাসী সমাজের একাংশ গ্রামছাড়া করেছে এক পরিবারকে। প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে গোটা পরিবার আত্মগোপন করে রয়েছেন পাশের গ্রামে। ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা ব্লকের যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের কানপাড়া গ্রামে। এই ঘটনায় রবিবার স্থানীয় মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ পেয়েই ওই গ্রামে ছুটে গিয়েছে মালদা থানার পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রামে সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অভিযুক্তরা সবাই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে বলে খবর।

    কানপাড়া গ্রামে বসবাস করেন মুসিলাল সোরেন। বয়স ২৪ বছর। পেশায় শ্রমিক। তাঁর স্ত্রী সোনালি কিস্কু ৮ মাসের অন্তঃসত্তা। মা জগা টুডু এখন আর তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না। ভাই সেমন্ত সোরেনও শ্রমিকের কাজ করেন। অভাবী সংসার। পরিবারের কেউ শিক্ষার আলো দেখেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মুসিলাল অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় পরিবারের পরিচিত এক মহিলা তাঁদের বাড়িতে আসেন। তাঁর নাম সাগি মুর্মু। ৫০ বছর বয়সী সাগি পাশের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গ্রামে কবিরাজিও করেন। গাছালি ওষুধপত্র দেয় সাগি। তিনি মুসিলালকেও সেই ওষুধ দেন। বেশ কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন মুসিলাল। সুস্থ হওয়ার পর গত শুক্রবার মুসিলালকে নিয়ে সাগি দক্ষিণ দিনাজপুরের বোল্লা কালীমন্দিরে পুজো দিতে যান। ফেরার সময় ওই মন্দির থেকে কালীর ছবি ও কিছুটা লাল শালু সঙ্গে নিয়ে আসেন সাগি। তিনি মুসিলালের বাড়িতে সেই ছবি ও লাল শালু টাঙিয়ে দেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, কালীর ছবি ও মন্দির থেকে পাওয়া লাল শালু বাড়িতে টাঙিয়ে রাখলে পরিবারের কেউ আর অসুস্থ হবে না। এতেই ঘটে বিপত্তি। ঘরে কালীর ছবি ও লাল শালু টাঙানোর ঘটনা মেনে নিতে পারেনি মুসিলালেরই আত্মীয়রা। তারা সাগিকে ফুকসিন (ডাইন) চিহ্নিত করেন। তাদের মাথা ছিল মদন সোরেন, মাইকু হাঁসদা ও পার্বতী সোরেন। সাগির সঙ্গে থাকার জন্য তারা মুসিলালকেও ফুকসিনের সহযোগি বলে চিহ্নিত করে। শুক্রবার রাতেই তারা সাগি ও মুসিলালকে মারার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সাগি ও মুসিলাল বুঝে যান, গ্রামে থাকলে তাঁরা খুন হযে যাবেন। তাঁরা রাতেই গ্রাম থেকে পালিয়ে যান। শনিবার সকালে তাঁরা মালদা থানায় এসে গোটা ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানান। বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার ওই গ্রামে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ভিলেজ পুলিশ পাঠানো হয়। এদিকে শনিবার দুপুরে দলবল নিয়ে হানা দেয় মদনরা। তারাও মুসিলালেরও খোঁজ করতে থাকে। মুসিলালের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বুঝে যান, পরিস্থিতি খারাপ। তাঁরাও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান ৷ শনিবার পরিবারের সকলে গাছতলায় রাত কাটিয়েছেন। রবিবার সকালে তাঁরা ফের মালদা থানায় যান ৷ গোটা ঘটনায় মদন, মাইকু, পার্বতী সহ বেশ কযেকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সকলে। এদিন দুপুরে গ্রামে যায় পুলিশ। সেখানে একটি সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা সবাই গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

    এই ঘটনায় মুসিলাল সোরেন জানায়, সে বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিল। ডাক্তার দেখিয়েও কিছু হচ্ছিল না। এরপর সে সাগি দাদির সাথে দেখা করে ও চিকিৎসা করে। ভালো হয়ে যায় সে। এরপর তারা বোল্লা কালী মন্দিরে যায় সেখান থেকে ছবি ও লাল শালু এনে বাড়িতে টাঙিয়ে দি। কিন্তু এরপরেই মদন সোরেন, মাইকু হাঁসদা ও পার্বতী সোরেন তাদের ফুস্কিন অপবাদ দিয়ে প্রানে মারার চেষ্টা করে।

    এদিকে এই ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাগি মুর্মু জানান, তার কাছে মুসিলাল চিকিৎসার জন্য আসে। চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায় সে। এরপর আমি বোল্লা কালীর মন্দিরে যাবে শুনে সে জেদ করে। তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু মায়ের ছবি ও শালু লাগানোর সময় মদন সোরেন, মাইকু হাঁসদা ও পার্বতী সোরেন এরা তাদেরকে ফুস্কিন বলে হামলা চালায়। এরপর তারা ঘরছাড়া হয়ে আছে। তাই থানার কাছে তারা দাবী করেন, তাদের যেন পুনরায় বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে
https://www.youtube.com/embed/FmKm1oRPSrc